ইসলাম ধর্মে কোরবানির গুরুত্ব

কোরবানির গুরুত্ব ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত বিশেষ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও তাকওয়ার প্রতীক। আজ কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে আংশিক আলোচনা করা হলো:
কোরবানির শাব্দিক অর্থ: (আরবি: قربان) শব্দের অর্থ “নিকটবর্তী হওয়া” বা “আনুগত্য প্রদর্শন”।
পারিভাষিক অর্থ: নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে কোরবানি বলা হয়।
কোরবানির সূচনা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর ঘটনা থেকে শুরু হয়ে আজ অব্দি চলছে।
আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর সন্তানকে কোরবানি করতে প্রস্তুত হন। আল্লাহ তাঁর এই তাকওয়া ও আনুগত্য দেখে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর সন্তানকে রক্ষা করেন ও সেখানে একটি দুম্বা জবাই করার নির্দেশ দেন।
এটিই মূলত কোরবানির মূল শিক্ষা যে আল্লাহ আদেশে আদর্শ, আত্মত্যাগ ও আল্লাহর আদেশের উপর পরিপূর্ণ সমর্পণ হওয়া।
কোরবানি দেওয়ার হুকুম মূলত
হানাফি মাজহাবে: ওয়াজিব (যাদের উপর কোরবানির শর্ত পূরণ হয়, তাদের জন্য এটি পালন করা অপরিহার্য)
অন্যান্য মাজহাব মতে: এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (নবী (সা.) নিয়মিত করতেন এবং তা ছেড়ে দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছেন)
কোরবানি মূলত নির্দিষ্ট সময় বা দিনে হয়ে থাকে অর্থাৎ
ঈদুল আজহার দিন ও পরবর্তী দুই দিন (১০, ১১, ১২ জিলহজ) ১০ জিলহজ সকালে ঈদের নামাজ পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
নির্দিষ্ট কিছু ধরনের পশুর দ্বারাই কোরবানি দেওয়ার হুকুম রয়েছে
উট, গরু, মহিষ,ছাগল,ভেড়া, দুম্বা, গাড়ল, ইত্যাদি নির্দিষ্ট বয়স অর্থাৎ উট ৫ বছর,গরু ও মহিষ ২ বছর ও ছাগল,ভেড়া,দুম্বা গাড়ল ১ বছর পূর্ন হোওয়া শর্ত ।
কোরবানিতে পশু সুস্থ, দৃষ্টিহীন নয়, ল্যাংড়া বা রোগাক্রান্ত না হওয়া আবশ্যক।
কোরবানির আধ্যাত্মিক শিক্ষা হল
আত্মসমর্পণ: আল্লাহর আদেশ অবিচল ভাবে মেনে চলা। ও
তাকওয়া: পশু নয়, বরং আল্লাহ আমাদের মনোভাব ও খাঁটি নিয়তকে গ্রহণ করেন।
কোরবানির মাধ্যমে সমাজসেবা: কোরবানির গোশত গরিব-দুঃখী, অসহায় ও আত্মীয়স্বজনের মাঝে বণ্টন করা হয়, যা সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতির বার্তা দেয়।
কোরবানির গুরুত্ব বর্ণনায় কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন
কুরআন:
> “কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে আমাদের তাকওয়া।”
সূরা হজ: ৩৭
হাদীসে রাসূল (সা.) বর্ননা করেছেন
হাদীস
> “আদম সন্তানের যে কাজই হোক না কেন, কিয়ামতের দিন তাতে সর্বাধিক প্রিয় হবে কোরবানির দিন জবাই করা পশু। কারণ, তা কিয়ামতের দিন তার শিং, চুল, খুরসহ নিয়ে উপস্থিত হবে এবং তার রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট তা পৌঁছে যায়।”
– তিরমিযী
যাদের মধ্যে নিচের শর্তগুলো পরিপূরণ পাওয়া যাবে তাদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব
মুসলমান হওয়া
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া (বালেগ) ও
সম্পদশালী হওয়া অর্থাৎ
(নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া,
যেমন: সোনার নেসাব ৭.৫ তোলা বা ভরি
অথবা রূপার নেস ৫২.৫ তোলা বা ভরি অথবা এর সমমূল্যের অন্যান্য কোন সম্পদের মালিক হওয়া)
মূলকথা
কোরবানি শুধু একটি পশু জবাই নয়, বরং এটি নিজের খেয়াল-খুশি ও লোভের বিরুদ্ধে আত্মত্যাগের প্রতীক। কোরবানি আমাদের শেখায় আল্লাহর আদেশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং সমাজের দরিদ্র-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা।
(ধারাবাহিক চলবে)
মাও. মুফতি মোহাম্মাদ উল্লাহ্
খতীব: চকলোকমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ বগুড়া সদর।
পরিচালক: সরকার বাড়ি তালিমুল কোরআন কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা
Viewed 1330 times