October 5, 2025

Daily Amar Vasha

উত্তর জনপদে সত্য প্রকাশে দৃঢ়

বগুড়ায় বেড়েছে “কিশোর গ্যাং” এর দৌরাত্ম– প্রতিরোধ ও করণীয়

সম্পাদকীয়ঃ-  বগুড়া একসময় ছিল শিক্ষানুরাগী, সংস্কৃতিমনা ও শান্তিপ্রিয় মানুষের শহর। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আজ এ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা দিচ্ছে এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি—কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি। বিভিন্ন মহল্লা, অলিগলি কিংবা স্কুল-কলেজসংলগ্ন এলাকায় এখন ছোট ছোট কিশোর গ্যাং সক্রিয় হয়ে উঠছে।এই কিশোরদের মধ্যে কেউ কেউ ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং থেকে শুরু করে মাদক সেবন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে শুধু পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্যই এটি বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

সমস্যার পটভূমিঃ

বগুড়া শহরের শিববাটি, নবাববাড়ী রোড, নাটাইপাড়া, ফতেহ আলী, বগুড়া সাতমাথা ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ এলাকায় কিশোর গ্যাংদের আনাগোনা নিয়ে নাগরিকদের উদ্বেগ রয়েছে। শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে অনেকেই মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, টিকটক ও গেমস আসক্তির মাধ্যমে অসুস্থ বিনোদনের জগতে প্রবেশ করছে। সেখানে তারা নকল নায়কোচিত জীবনযাপন শেখে, আর বাস্তবে সেটির অনুকরণ করতে গিয়ে বিপথে চলে যাচ্ছে।

 

অভিভাবকের অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা, পারিবারিক অনুশাসনের অভাব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুস্থ সংস্কৃতি ও খেলাধুলার পরিবেশের ঘাটতি কিশোরদের গ্যাংমুখী করে তুলছে। উপরন্তু, অনেক সময় স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল এই কিশোরদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এতে তারা অপরাধকে সহজলভ্য হিসেবে দেখছে এবং ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের গভীরে প্রবেশ করছে।

 

সমাজে প্রভাবঃ

কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ডে বগুড়া শহরে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। দোকানপাটে চাঁদাবাজি, পথচারীদের হয়রানি, ছিনতাই, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা প্রতিদিনের খবর হয়ে উঠছে। ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কিশোর বয়সে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে তারা ভবিষ্যতে বড় ধরনের অপরাধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। একদিকে পরিবার হারাচ্ছে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় সন্তানকে, অন্যদিকে রাষ্ট্র হারাচ্ছে কর্মক্ষম নাগরিক।

 

প্রতিরোধের উপায়ঃ

এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রশাসন, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ—সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

অভিভাবকের ভূমিকাঃ

সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশছে, কী করছে—এই বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

পরিবারে মূল্যবোধ শিক্ষা, ধর্মীয় চর্চা ও নৈতিক শিক্ষা জোরদার করতে হবে।

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয়ঃ

স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা কার্যক্রম, খেলাধুলা, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাড়াতে হবে।

শিক্ষকদের উচিত ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক অবস্থা বোঝা এবং বিপথগামীদের প্রাথমিক পর্যায়েই চিহ্নিত করা।

 

প্রশাসনিক উদ্যোগঃ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিশোর গ্যাং শনাক্ত করে নজরদারিতে রাখতে হবে।

রাজনৈতিক স্বার্থে কিশোরদের ব্যবহার বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।বগুড়া শহরে বিশেষ কিশোর অপরাধ দমন টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে।

 

সামাজিক উদ্যোগঃ

এলাকাভিত্তিক ক্রীড়া ক্লাব, লাইব্রেরি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সক্রিয় করা জরুরি।

সমাজের সচেতন মহলকে কিশোরদের জন্য ইতিবাচক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে, যাতে তারা অপরাধ নয়, সৃজনশীল কাজে যুক্ত হয়।

বিজ্ঞাপন 

বগুড়ার কিশোররা দেশের আগামী দিনের সম্পদ।কিন্তু যদি আজ তারা গ্যাং সংস্কৃতির অন্ধকারে হারিয়ে যায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি হবে এক বড় দুর্ভাগ্য। প্রশাসনের কঠোরতা, অভিভাবকের যত্নশীলতা, শিক্ষকের দিকনির্দেশনা এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কিশোর অপরাধ ভবিষ্যতে বগুড়াকে এক অনিরাপদ শহরে পরিণত করবে। তাই দেরি নয়—আজই সবার সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার।

Viewed 950 times

Spread the news
Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.
error: Content is protected !!