October 5, 2025

Daily Amar Vasha

উত্তর জনপদে সত্য প্রকাশে দৃঢ়

ফেসবুক-টিকটক আসক্তিঃশিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়

সম্পাদকীয়ঃ আজকের যুগকে বলা হয় প্রযুক্তির যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে তা অশনি সংকেতও বয়ে আনছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ফেসবুক এবং ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় ধরনের আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই আসক্তি তাদের শিক্ষা, মানসিকতা, সামাজিকতা এবং ভবিষ্যৎকে এক অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

 

শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রধান সময় হওয়া উচিত পড়াশোনা, আত্মোন্নয়ন এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য। অথচ দেখা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী ঘন্টার পর ঘন্টা ফেসবুক বা টিকটকে সময় ব্যয় করছে। একদিকে তারা পাঠ্যপুস্তক খুলে বসতে অনীহা প্রকাশ করছে, অন্যদিকে ভিডিও বানানো, লাইক-কমেন্ট পাওয়া কিংবা ভার্চুয়াল জনপ্রিয়তার পিছনে ছুটছে। এর ফলে তারা তাদের মূল লক্ষ্য—ভবিষ্যৎ গঠনের পথ থেকে সরে যাচ্ছে।

 

শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিনের মূল্যবান সময় পড়াশোনার পেছনে না দিয়ে শিক্ষার্থীরা ফোনে ডুবে থাকে। ফলস্বরূপ পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করছে এবং মানসিক চাপ বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, যা ডিপ্রেশন বা মানসিক অস্থিরতার কারণ হচ্ছে।

 

সামাজিক অবক্ষয় তৈরি হচ্ছে। টিকটকের নামে অশ্লীলতা, অশালীন প্রতিযোগিতা এবং অযাচিত কনটেন্টে শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হচ্ছে। কিশোররা ভুলভাবে ভাবছে যে এইসব ভিডিও বানানোই জীবনের বড় অর্জন। এর ফলে নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক অশান্তি এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। ফেসবুকেও অযথা ট্রল, ভুয়া তথ্য ছড়ানো এবং নেতিবাচক গ্রুপ সংস্কৃতির কারণে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে।

 

শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। দীর্ঘ সময় মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখে কাটানোর কারণে চোখের সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস, এমনকি স্থূলতাও বাড়ছে। খেলাধুলা বা বাইরের কর্মকাণ্ডে অনাগ্রহ দেখা দিচ্ছে, যা সুস্থ দেহ-মন বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।

 

সবচেয়ে বড় কথা, এই আসক্তি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে। যেসব সময়ে তারা নতুন দক্ষতা শিখতে পারত, নতুন বই পড়তে পারত, কিংবা জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারত, সেই সময় তারা হারাচ্ছে ভার্চুয়াল জগতে। ফলস্বরূপ তারা চাকরিক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে এবং সমাজে সক্রিয় ভূমিকা পালনে অক্ষম হয়ে পড়ছে।

 

তবে সমস্যার সমাধান একেবারেই অসম্ভব নয়। পরিবার থেকে সচেতনতা জরুরি। অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সাথে সময় কাটানো, তাদের আগ্রহের দিকটি বোঝা এবং পড়াশোনার পাশাপাশি বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করা। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ডিজিটাল লিটারেসি শিক্ষা চালু করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখতে পারে। সরকার ও সমাজের পক্ষ থেকেও অশ্লীল বা ক্ষতিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

সবশেষে বলা যায়, ফেসবুক বা টিকটক কোনোভাবেই খারাপ নয় যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। এগুলো তথ্য বিনিময়, সৃজনশীলতা প্রকাশ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ এনে দিতে পারে। কিন্তু সীমাহীন আসক্তি শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস করছে। তাই আজই সময় এসেছে সচেতন হওয়ার, না হলে শিক্ষার্থীদের এই প্রজন্ম ভার্চুয়াল স্বপ্নের ঘোরে নিজেদের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে।

Viewed 750 times

Spread the news
Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.
error: Content is protected !!