বগুড়ার ফুটপাত দখলঃনাগরিক দুর্ভোগের অন্তহীন যন্ত্রণা

সম্পাদকীয়ঃ বগুড়া শহরের প্রধান সড়কগুলোর পাশের ফুটপাতগুলো একসময় ছিল পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু আজ সেই ফুটপাতগুলো পথচারীদের জন্য নয়, বরং দখলদারদের দখলে পরিণত হয়েছে। হকার, অস্থায়ী দোকানপাট, রাজনৈতিক ব্যানার-ফেস্টুন, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে স্থায়ী অবকাঠামো ফুটপাতকে পুরোপুরি গ্রাস করেছে। ফলে পথচারীরা বাধ্য হয়ে সড়কে নামতে বাধ্য হয়, যা প্রতিদিনই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই দখলদারিত্ব শুধু একটি সাময়িক অসুবিধা নয়; বরং এটি নগরবাসীর জন্য একটি স্থায়ী দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, সাতমাথা, শহীদ মিনার চত্বর, নতুন বাজার, সাবগ্রাম রোড, এবং শহরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ফুটপাতের উপর দোকানপাট বসানো এখন নিয়মিত দৃশ্য। পথচারীরা শিশু বা বৃদ্ধদের নিয়ে চলাচল করতে পারছে না স্বাভাবিকভাবে। দুর্ঘটনা তো হচ্ছেই, তার সাথে সময় নষ্ট, মানসিক চাপ এবং বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করছে এই দখল।
অন্যদিকে, ফুটপাত দখল শহরের সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলাকেও নষ্ট করছে। শহর উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফুটপাত সংস্কার করা হলেও, সেগুলো দখল মুক্ত না হলে সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে যায়। এর ফলে সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে এবং নগরবাসী সেই সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এখন করণীয় কী?
প্রথমত, পৌরসভা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করতে হবে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলদারদের সরিয়ে দিতে হবে এবং পুনরায় দখল ঠেকাতে কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।
দ্বিতীয়ত, হকারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। নির্দিষ্ট হকার মার্কেট বা নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রির সুযোগ দিলে তারা যেমন জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে, তেমনি পথচারীরাও তাদের অধিকার ফিরে পাবে।
তৃতীয়ত, নাগরিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। ফুটপাত যে পথচারীর, এটি সবাইকে বুঝতে হবে এবং সেভাবেই আচরণ করতে হবে।
বগুড়া শহর দিন দিন জনবহুল হচ্ছে। এই শহরকে বাসযোগ্য, নিরাপদ এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে হলে ফুটপাত দখলমুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। নগর কর্তৃপক্ষের দৃঢ় পদক্ষেপ ও নাগরিকদের সহযোগিতার মাধ্যমেই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
Viewed 2600 times