July 4, 2025

Daily Amar Vasha

উত্তর জনপদে সত্য প্রকাশে দৃঢ়

যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনের সরকারি খাদ্য কর্মকর্তা স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়াঃ  যৌতুকের কড়াল গ্রাসে দুই দফায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গৃহবধু কাশফিয়া। কাশফিয়া খন্দকার নওগাঁ জেলার রানীনগর থানাধীন বাহাদুরপুরের খন্দকার ইউসুফ আলীর মেয়ে। দীর্ঘ ১ যুগ যাবত তিনি বগুড়া শহরের সেউজগাড়ীতে বসবাস করছেন। প্রায় ১৪ বছর আগে পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানাধীন ভাটকুড়ি এলাকার হাবিবুর রহমান ও মেহেনুর বেগম দম্পতির ছেলে শাহিনুুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন কাশফিয়া। তার স্বামী বগুড়া সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপ খাদ্য পরিদর্শক হিসাবে চাকুরী করছেন।

 

বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে আসবাবপত্র বাবদ ১ লক্ষ এবং মোটরসাইকেল বাবদ আড়াই লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন কাশফিয়ার পরিবার। দীর্ঘদিনের সংসার চলাকালীন গত তিন বছর যাবৎ কাশফিয়া তার স্বামী শাহিনুর রহমানের আচরণে পরকিয়ার প্রভাব লক্ষ্য করেন। আর এতেই বাধে বিপত্তি। স্বামীর ভিন্ন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করায় প্রতিনিয়ত নির্যাতন চলতে থাকে কাশফিয়ার উপর। ৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবীতে চলতি বছরের গত ২০ মার্চের রাত ১০টায় প্রথমবার নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এরপর ০৯ এপ্রিল বিকাল ৫টায় দ্বিতীয় দফায় একই কারনে নির্যাতনের শিকার হন। পরবর্তীতে তাকে জোর করে ফ্লাট থেকে বের করে দেন অভিযুক্ত ঐ কর্মকর্তা।

 

নির্যাতনের শিকার হয়ে বিজ্ঞ আদালতের দারস্থ হয়েছেন কাশফিয়া খন্দকার। তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-০১ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৯১পি/২০২৫ এর প্রেক্ষিতে ১৫ এপ্রিল বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মোঃ আনোয়ারুল হক ১১(ক) ধারায় আনিত অভিযোগটি এজাহার হিসাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে ওসি ২২ এপ্রিল মামলাটি এজাহার হিসাবে রুজু করেন। মামলা নং-৬১।

 

 

অপরদিকে, কাশফিয়ার স্বামী শাহিনুর রহমান বগুড়া সদর উপজেলা খাদ্য গুদামের উপ-খাদ্য পরিদর্শক কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দুই দফায় ছুটির আবেদন করেছেন। শুধু তাই নয়, তার ছুটির মেয়াদ শেষ হবার পরেও তিনি এখনো তার কর্মস্থলে যোগদান করেননি। এমনকি তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটিও বন্ধ রেখেছেন। এজন্য ২০ মে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত দুটি শোকজ নোটিস অভিযুক্ত শাহিনুরের গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় পাঠানো হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন জবাব দেননি।

 

এছাড়াও শাহিনুরের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। নামুজা খাদ্যগুদামে কর্মরত থাকাকালীন ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর  ৫৯ বস্তায় ১,৭৭১ মেট্রিক টন চাল এবং ২৯ সেপ্টেম্বর ৬০ বস্তায় ১,৭৭১ মেট্রিক টন চাল বিতরণ দেখানো হলেও উল্লেখিত চাল সহ খালি ২৩ বস্তা আত্মসাৎ করতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। একই তারিখে ১,৫৭২ মেট্রিক টন গম আত্মসাৎ করেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে সরকারী কর্মচারী আইন ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও (ঘ) অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দূর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দাখিল করা হয়। উক্ত মামলা তদন্তের জন্য নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান কে দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

 

এব্যাপারে ভুক্তভোগী নারী কাশফিয়া খন্দকার বলেন, আমি আমার দুই অবুঝ শিশু সন্তানের সাথে যে অন্যায় হয়েছে সেই অপরাধীর শাস্তি চাই। সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হারুন-উর-রশিদ বলেন, তিনি অসুস্থতার ছুটির সময় শেষ হবার পরেও যোগদান না করায় আমি ব্যাখ্যা চেয়ে দুই দফায় শোকজ নোটিস করেছি। এখনো কোন লিখিত উত্তর পাইনি। বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাইফুল কাবির খান বলেন, উক্ত বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। যদি ঘটনার সত্যতা থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী অফিশিয়াল নিয়মে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Viewed 290 times

Spread the news
Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.
error: Content is protected !!