অনলাইন গ্যাম্বেলিংঃধ্বংসের পথে যুব সমাজ
সম্পাদকীয়ঃ বিশ্ব এখন আধুনিক প্রযুক্তির উপরে নির্ভরশীল।এখন বিশ্বের প্রতিটি দেশেয় আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে।শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যুবক-যুবতী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধি পর্যন্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ইন্টারনেট ও আধুনিক প্রযুক্তির উপরে।এখন একটি মূহুর্তেও যেন ইন্টারনেট এবং আধুনিক প্রযুক্তির ছাড়া চলা অসম্ভব।এই আধুনিক প্রযুক্তির একটি অবিশ্বাস্য আবিষ্কার হল স্মার্টফোন।এর সুফলো যেমন আছে,তার চেয়ে বেশি কুফল সম্পর্কে আমার ধীরে ধীরে অবগত হয়েছি।আপনি হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ার যে কোন একটি অ্যাপস স্ক্রল করছেন।হঠাৎ আপনার সামনে বিজ্ঞাপন আকারে চমকপ্রদ সব প্রলোভন হাজির হলো অনলাইন গ্যাম্বেলিং একটি অ্যাপস!!যেন আপনি আপনার ফোনে আপ্যসটি ইন্সটল করার সাথে সাথেই বনে যাবেন কোটিপতি!!এই প্রলোভনের শিকার হয়ে সর্বোস্ব হারিয়ে পথে বসছে প্রতিদিন লাখো মানুষ!!
অনলাইন গ্যাম্বেলিং এর ইতিহাসঃ
অনলাইন গ্যাম্বেলিং এর ইতিহাস ১৯৭০-এর দশকে প্যাকেট-ভিত্তিক কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের প্রাথমিক দিনগুলিতে ফিরে আসে।অনলাইন গেমের একটি প্রাথমিক উদাহরণ হল MUD, যার মধ্যে প্রথমটি, MUD1, যা ১৯৭৮ সালে তৈরি হয়েছিল এবং ১৯৮০ সালে ARPANet-এর সাথে সংযুক্ত হওয়ার আগে মূলত একটি অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় অনলাইন গ্যাম্বেলিং এর ওয়েবসাইটঃ
২০২৫ ইং সালে বাংলাদেশের সেরা সব অনলাইন ক্যাসিনোর শীর্ষ পর্যায়ে আছে 1 BC Game,দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে Mostbet,তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে 22Be Dafabet।
বর্তমানে এমন লক্ষ লক্ষ অনলাইন গ্যাম্বেলিং এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লোভে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।
অনলাইন গ্যাম্বেলিং এর সম্পর্কিত বাংলাদেশের আইন ব্যাবস্থাঃ
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ,২০২৫-এর ধারা ২০ অনুযায়ী অনলাইন জুয়া খেলা,বাংলাদেশ সরকার দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্ম বান্ধব রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে এবিষয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পযবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।জুয়া সংক্রান্ত অ্যাপ বা পোর্টাল তৈরি ও প্রচারণা চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।এই অপরাধের জন্য ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য।
বাংলাদেশে অনলাইন গ্যাম্বেলিং এর সম্পর্কিত শাস্তিঃ
২০ (১) যদি কোনো ব্যক্তি সাইবার স্পেসে জুয়া খেলার নিমিত্ত কোনো পোর্টাল বা অ্যাপস বা ডিভাইস তৈরি করেন বা পরিচালনা করেন বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করেন বা খেলায় সহায়তা বা উৎসাহ প্রদান করেন বা উৎসাহ প্রদানের জন্য বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রচার বা বিজ্ঞাপিত করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
২০(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে,বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
মিডিয়া সেলিব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য নির্দেশনাঃ
দেশের সকল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে যে, তারা যেন জুয়া, বেটিং, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক কোনো পণ্য, সেবা বা ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন বা প্রোমোশনাল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। এ ধরণের বিজ্ঞাপন দেওয়া বা প্রচারে সহায়তা করা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।জনস্বার্থে নৈতিক ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে একটি সুস্থ ডিজিটাল সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
অনলাইন গ্যাম্বেলিং সমাজের একটি মারাত্মক ব্যাধির পাশাপাশি সমাজের জন্য হুমকির স্বরুপ।নানান বয়সের নানা শ্রেণীর পেশার মানুষ এই অস্কক্তিতে হারিয়েছে সর্বস্ব। বেড়েছে সামাজিক অবক্ষয়। বাংলাদেশ সরকার দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্ম বান্ধব রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।এ বিষয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পযবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজের মাধ্যমে পরিত্রাণ পেতে পারেন দেশবাসী।
_আশিক সুজন।
Viewed 3500 times