সুরা এখলাসের মর্ম ও ফজিলত

ডেস্ক রিপোর্ট : সুরা এখলাস কুরআনে কারিমের ছোট একটি সুরা। এতে চমৎকারভাবে আল্লাহ তায়ালার সত্তাগত পরিচয় ফুটে উঠেছে। আয়াত সংখ্যার বিবেচনায় ছোট হলেও মর্যাদা ও সাওয়াবের দিক থেকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।
কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান: হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জনৈক সাহাবিকে দেখলেন, বারবার সুরা এখলাস পাঠ করছেন। সকাল হলে ওই ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সামনে বিষয়টি পেশ করলেন। লোকটি হয়তো ভেবেছে, এ ছোট একটি সুরা বারংবার পড়া তেমন সওয়াবের কাজ নয়, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! সুরা এখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০১৩ )
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন বললেন, তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে পারে না?
সাহাবীরা উত্তর দিলেন, আমরা দুর্বল, প্রতি রাতে এত বেশি পরিমাণ তিলাওয়াত করা আমাদের জন্য কষ্টকর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তাআলা পুরো কুরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন এবং সুরা এখলাসকে তিন ভাগের এক ভাগ গণ্য করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৭৪৯৮)
জান্নাতে অট্টালিকা নির্মাণ: হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সুরা এখলাস দশবার পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি অট্টালিকা নির্মাণ করে দিবেন।
হজরত উমর বিন খাত্তাব (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, তাহলে তো আমরা অনেক অট্টালিকা লাভ করে ফেলব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তাআলা এর চেয়েও অধিক দানকারী, অতি পবিত্র। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ২২৮৮)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি সুরা এখলাস দশবার পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি অট্টালিকা নির্মাণ করবেন। যে ২০ বার পড়বে তার জন্য দুটি অট্টালিকা নির্মাণ করবেন। যে ৩০ বার পড়বে তার জন্য তিনটি অট্টালিকা তৈরি করবেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
জান্নাতের সুসংবাদ: হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি নবীজির কাছে বসা ছিলাম একজন লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার এক ভাই এই সুরাটি পড়তে ভালোবাসে, তখন নবি (সা.)বললেন, ‘তোমার ভাইকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)
এই সুরাকে ভালোবাসার কারণে জান্নাত: হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসুল, আমি এই সুরাকে ভালোবাসি। নবীজি (সা.)বললেন, তোমার এই সুরার ভালোবাসাই তোমাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
ডান দিক থেকে জান্নাতে প্রবেশ: হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ডান কাতে শুয়ে সুরা এখলাস একশতবার পড়ে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলবেন, হে আমার বান্দা, তুমি তোমার ডান পাশ দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো। (তাফসিরে ইবনে কাসির )
ফেরেশতা জানাজায় শরিক হওয়া: সুরা এখলাস এত দামি সুরা, এক সাহাবি অধিক পরিমাণে এই সুরা পাঠ করার কারণে তার জানাজায় ৭০ হাজার ফেরেশতা অংশগ্রহণ করেছিল।
হাদিস শরিফে এসেছে, মুআবিয়া বিন মুআবিয়া মুযানি লাইসি (রা.) ইন্তেকাল করলে হজরত জিবরাঈল (আ.) সত্তর হাজার ফেরেশতাসহ নবিজীর কাছে আগমন করেন। নবি কারিম (সা.) জিবরাঈল এবং এইসব ফেরেশতাদের নিয়ে তার জানাজায় শরিক হলেন। নামাজ শেষ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে জিবরাঈল, কোন্ আমলের মাধ্যমে মুআবিয়া এই উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছে?
জিবরাঈল (আ.) উত্তরে বললেন, এই মর্যাদা লাভের কারণ হলো, সে দাঁড়িয়ে, বসে, হেঁটেহেঁটে, সওয়ারীতে তথা সর্বাবস্থায় সুরা এখলাস পাঠ করত। (মুজামে কাবির, হাদিস : ৭৫৩৭ )
এছাড়াও সুরা এখলাসের অনেক ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই সুরা বেশি বেশি পাঠ করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া রশিদিয়া তালিমুল কোরআন, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা।
Viewed 100 times