October 5, 2025

Daily Amar Vasha

উত্তর জনপদে সত্য প্রকাশে দৃঢ়

জেনারেটর সঠিক লোড নিচ্ছে কি না বুঝবেন যেভাবে

ডেস্ক রিপোর্ট : বিদ্যুৎ বিভ্রাট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। যার কারণেই বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে হাসপাতাল, কারখানা কিংবা অফিস; প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এছাড়াও, শিল্পখাত এবং অন্যান্য উৎপাদনমুখী শিল্পে উৎপাদন প্রক্রিয়া সচল রাখতে হাই-ক্যাপাসিটির জেনারেটর ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট অপরিহার্য।

কিন্তু অনেক সময়েই এটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি জ্বালানি খরচ করছে কি না কিংবা ব্যবহৃত জেনারেটরটি আসলে কতটা কার্যকর তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাজার থেকে আন-অফিশিয়াল বা নন-ব্র্যান্ডেড  জেনারেটর কেনা হয় কিছুটা সস্তা দামের কারণে। কিন্তু এই ধরনের যন্ত্রপাতি দীর্ঘমেয়াদে বিপদ ডেকে আনতে পারে।

তবে, কিছু লক্ষণ যেমন, বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়া, অটো শাট ডাউন, অতিরিক্ত কম্পন, শব্দ বা ধোঁয়া এসব থেকেই প্রাথমিকভাবে বোঝা যেতে পারে জেনারেটরটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। তাই জেনারেটরের কার্যক্ষমতা নির্ধারণে ক্যাপাসিটি টেস্টিং অত্যন্ত জরুরি।

ক্যাপাসিটি টেস্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ

একটি জেনারেটর স্পেসিফিকেশন এ উল্লিখিত উৎপাদন ক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে কি না, তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয়।

এই পরীক্ষার মাধ্যমে জেনারেটরের জ্বালানি দক্ষতা, পাওয়ার জেনারেশন ক্ষমতা এবং সর্বোপরি কার্যকারিতা যাচাই করা যায়। একটি সাধারণ নিম্নমানের নন-ব্র্যান্ডড জেনারেটর অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করে এবং ভোল্টেজ ওঠা-নামার কারণে ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত মেশিনারিজ ও বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত  নিত্যপ্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির স্থায়ী সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়াও, ত্রুটিপূর্ণ জেনারেটর ওভারলোডিং সহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক  ঝুঁকির কারণ হতে পারে, যা দুর্ঘটনা সহ বড় কোনো আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ায়। ক্যাপাসিটি টেস্ট এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।  ক্যাপাসিটি টেস্ট এর ফলে জেনারেটরের লোড বহন ক্ষমতা, সাউন্ড লেভেল, ভোল্টেজ প্রোটেকশন, নিরাপত্তা প্রোটেকশন সহ আরও গুরুত্তপূর্ণ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে কীভাবে এই সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে 

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে জেনারেটরের সঠিক কার্যক্ষমতা যাচাই বাধ্যতামূলক। জরুরি কাজের জেনারেটরকে প্রতি মাসে অন্তত ৩০ শতাংশ লোডে ৩০ মিনিট পরীক্ষা করা হয়।

এছাড়াও, প্রতি বছরে ৭৫ শতাংশ লোডে অন্তত দু’ ঘণ্টার টেস্ট করার সুপারিশ করা হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে উক্ত জেনারেটর ব্যবহার বা বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি অনেক দেশে সনদ ছাড়া জেনারেটর ইনস্টলেশনই অবৈধ।

বাংলাদেশে জেনারেটর ক্যাপাসিটি টেস্টিং যারা করছে  

দেশে বুয়েট এবং এমআইএসটি’তে সীমিত পরিসরে জেনারেটর লোড টেস্টিং ফ্যাসিলিটি আছে। এটি মূলত বেসিক লোড টেস্টিং বা ফাংশনালিটি চেক। তবে, বাংলাদেশে একমাত্র বিদ্যুত খাতে সুপরিচিত এনার্জিপ্যাক-ই সম্পূর্ণ ক্যাপাসিটি টেস্ট বা ফুল লোড টেস্ট সম্পন্ন করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের মধ্যে একটি মানসম্মত এবং নির্ভরযোগ্য জেনারেটর টেস্টিং সুবিধার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ২০২২ সালে দেশের প্রথম এবং অন্যতম খ্যাতিমান নারী প্রকৌশলী ইঞ্জি. খালেদা শাহরিয়ার কবির ডোরা’র নামে এই স্টেট-অব-দি-আর্ট টেস্টিং ল্যাবটি প্রতিষ্ঠা করে। তাদের এই ল্যাবের পরিষেবা সকল ব্র্যান্ড, সরবরাহকারী এবং গ্রাহকদের জন্যও উন্মুক্ত রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড “গ্ল্যাড” জেনারেটরের ফুল লোড টেস্টের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হয়েই গ্রাহকের কাছে পণ্য সরবরাহ করে আসছে।

জেনারেটর বাজারের ঝুঁকি কমাতে এবং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে—জেনারেটরের মান নির্ধারণ ও তদারকির জন্য একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি, সনদবিহীন জেনারেটর আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধকরণ, এবং অনুমোদিত ল্যাব থেকে টেস্টিং বাধ্যতামূলক করা।

একজন সচেতন ভোক্তা হিসেবে প্রত্যেকের উচিত ল্যাব টেস্টেড ভাল ব্র্যান্ডেড জেনারেটর ব্যবহার করা। কারণ, এটি শুধু অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ই কমাবে না বরং সার্বিক নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করবে।

Viewed 400 times

Spread the news
Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.
error: Content is protected !!