July 5, 2025

Daily Amar Vasha

উত্তর জনপদে সত্য প্রকাশে দৃঢ়

সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি, উপকূলে জলোচ্ছ্বাস

দ.আ.ভ ডেক্স রিপোর্টঃ  বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি। শুক্রবার সন্ধ্যায় এটি বাংলাদেশের শেরপুর ও পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থান করছিল। ওই সময়ে সুস্পষ্ট স্থল লঘুচাপে পরিণত হয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে।

 

 

লঘুচাপের কারণে আজও ঢাকাসহ সারা দেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

 

 

এদিকে এর প্রভাবে শুক্রবার সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। কয়েক ফুট জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অনেক এলাকা। এর মধ্যে অনেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দমকা হাওয়ায় উপকূলীয় এলাকার অনেক বসতি ভেঙে গেছে। বিঘ্নিত হয় নৌযান চলাচল।

 

 

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক শুক্রবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, নিম্নচাপটি বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে দু-একদিন ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে তিন নম্বর এবং অভ্যন্তরীণ নৌবন্দরগুলোকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

 

 

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার আবহাওয়া বার্তায় জানানো হয়, স্থল লঘুচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও রংপুর বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। শুক্রবার সর্বোচ্চ ২২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে চট্টগ্রামে। সিলেটে ১৯৪, ঢাকায় ১২৭, কক্সবাজার ১৬৭ ও কুমিল্লায় ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

 

এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস ও ভারি বৃষ্টিপাতে পটুয়াখালীর অন্তত ১ লাখ ১৯ হাজার ১৩০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

 

 

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি। সন্দ্বীপের সঙ্গে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনসহ অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ে পুরো প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। বন্ধ হয়েছে দ্বীপের সঙ্গে টেকনাফের সব ধরনের নৌ যোগাযোগ।

 

 

একই সঙ্গে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, টেকনাফ, ঈদগাঁও, রামু ও চকরিয়ায় নদীর বাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়েছে সাগরের পানি।

 

 

গত ২৪ ঘণ্টায় চকরিয়ায় বজ্রপাতে একজন এবং পানিতে ডুবে মহেশখালীতে একজনসহ মোট দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

 

 

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুট জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপের গলাচিপা, কোনাপাড়া, দক্ষিণপাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া মাছ ধরার ৫টি ট্রলার জোয়ারের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে।

 

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস ও ভারি বৃষ্টিপাতে পটুয়াখালীর অন্তত ১ লাখ ১৯ হাজার ১৩০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলার আটটি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় পানি প্রবেশ করে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ অবস্থা। বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্রাধিক বসতঘর ও অবকাঠামো। শুক্রবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

 

 

এ কার্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের মতো রূপ না নিলেও এবারকার স্থল গভীর নিম্নচাপ পটুয়াখালীতে ফেলে গেছে ব্যাপক ক্ষতির ছাপ। এতে এক হাজার ২৭৭টি ঘরবাড়ি আংশিক এবং ৯টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জেলায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ টাকার জরুরি ত্রাণ সহায়তা দাবি করা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাছে।

 

 

এদিকে, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও বাউফল উপজেলার বহু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি, ঘের ও কৃষিজমি। অনেক জায়গায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে উঁচু বাঁধ বা স্কুলে ঠাঁই নিয়েছেন।

 

নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে একদিনে এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। এতে উপকূলীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ও চরহাজারী ইউনিয়ন, চরএলাহী ও হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন গ্রাম ব্যাপকভাবে প্লাবিত হওয়ায় পরিস্থিতি দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে।

 

 

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করেছে নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ ও জাতীয় উদ্যানের বনের হরিণ। হাতিয়ার চরইশ্বর, নলচিরা, ঢালচর, সুখচর, চরঘাসিয়াসহ বিভিন্ন চরের সড়ক ও বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

 

 

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমদ বলেন, বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন, রেডক্রিসেন্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।

 

 

এছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, শরীয়তপুরের সদর, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, বরগুনার আমতলী, ভোলার চরফ্যাশন, চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে ঢুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ।

Viewed 1880 times

Spread the news
Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.
error: Content is protected !!