ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে

ডেস্ক রিপোর্টঃ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেখার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করতে বলেছে। বিএনপির দাবি-চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
রোববার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই সরকারের নেতৃত্বে জনগণ দেশের ইতিহাসে অবিলম্বে অবাধ, নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায়।
সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক, জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। এ কারণে হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে হলেও নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। প্রতিটি নাগরিকদের নিজেদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকতে হবে। দেশের জনগণ সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্যই জনগণের ন্যায্য দাবি শুনতে ও মানতে বাধ্য। এখানে সরকারের মান-অভিমান বা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই।
দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। যে কারণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিদিন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মুহূর্তে তাদের দাবি শোনার কেউ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট পাশের ঠিক আগ মুহূর্তে হঠাৎ করেই এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি করেছে বলে মনে করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এটি অর্থনীতির জন্য খুব ভালো বিষয় নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে সবার বিশ্বাস।
সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, অল্প কিংবা বেশি সংস্কার বলে কিছু নেই। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে প্রায়োগিক সংস্কার বেশি জরুরি।
অন্তর্বর্তী সরকার জবাবদিহিমূলক নয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধতার সংকট হয়তো নেই। তবে এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। তাই নৈতিক কারণে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের কাছে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে বা রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা কার্যকর ও টেকসই হয় না, হবেও না।
স্বৈরাচারের মাথাচাড়ায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় যে কোনো ধরনের অজুহাত কিংবা গড়িমসির সুযোগ নিয়ে পতিত পলাতক পরাজিত স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অপেক্ষায় কিন্তু রয়েছে। তবে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট তাঁবেদার অপশক্তির পুনর্বাসনের পথরোধ করা সম্ভব। নিজ নিজ দলীয় আদর্শ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রক্রিয়াগত বিরোধ দৃশ্যমান হলেও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দেশ ও জনগণের স্বার্থে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় একতরফা ইস্যুতে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বিগত ৫ আগস্টের মতোই ঐক্যবদ্ধ।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এসপিপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহদী আমিন, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাসানী জনশক্তির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা একাংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
Viewed 880 times