May 19, 2025

Daily Amar Vasha

উত্তর জনপদে সত্য প্রকাশে দৃঢ়

চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া ব্যক্তির সবশেষ অবস্থা নিয়ে যা জানা গেল

মোঃইমরুল কায়েস,বগুড়াঃ  সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও, যেখানে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে ট্রেনের জানালায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পরে প্লাটফর্মে আসতেই তাকে ফেলে দেওয়া হলে তিনি চলে যান ট্রেনের নিচে। পরে অভিযোগ ওঠে, ওই ব্যক্তি ছিল মোবাইল চোর। তবে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা।

জানা গেছে, ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান (৪০)। তার বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৮ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার নশরৎপুর স্টেশনে বগুড়া থেকে সান্তাহার অভিমুখী একটি কমিউটার ট্রেনে এই ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
মতিউর পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। দুই বছর আগে দূতাবাস এবং এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন। ২০ দিন আগে বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলার তালশান গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। সৌদি আরবে গিয়ে সজীবের বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা সাত-আট দিন আগে মতিউরের বাড়িতে গিয়ে কাগজপত্রের বিষয়ে জানতে চায়। এ নিয়ে সেখানে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে বগুড়া থেকে ট্রেনে মতিউরকে একা পেয়ে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং সজীবের শ্যালকরা মিলে মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে তাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তার কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ মতিউরের পরিবারের।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব বলেন, আমার বাবা পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। গত দেড় বছর থেকে সৌদি আরবের অ্যাম্বাসির মাধ্যমে লোক পাঠানোর কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত তিন-চারজনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। তারা সে দেশে ভালো আছেন। গত ১৫ দিন আগে আমার বাবা বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলার তালশন গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজিব হোসেনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। সৌদি আরবে পাঠানো বাবদ তার কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সেখানে যেয়ে বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজিব তার বাবাকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে গত সাত-আট দিন আগে বিভিন্ন ধরনের হুমকিধমকি দিয়ে যায়। এরই জেরে বগুড়া থেকে ট্রেনে বাড়িতে ফেরার পথে সজিবের ছোট ভাই রাকিব এবং সজীবের শ্যালকরা আমার বাবাকে মোবাইল চোর বলে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাবা খুব কষ্ট করে প্রায় চার-পাঁচ মিনিট ট্রেনের সঙ্গে ঝুলে ছিল। বাবার কাছে ব্যবসায়িক কাজের ৫০ হাজার টাকা ছিল সেটিও তারা কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে ট্রেনটি আদমদিঘি উপজেলার নশরৎপুর স্টেশনে এলে সেখানকার প্লাটফর্মের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আমার বাবা ট্রেনের নিচে পড়ে যায়। ট্রেনের নিচে পড়লেও বাবা কোনরকম প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু সেখানকার উৎসুক জনতা বাবাকে মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারী ভেবে বেধরক মারধর করতে থাকেন।
আহসান হাবিব কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, বাবাকে কোনো রকম সেখান থেকে উদ্ধার করে আদমদিঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাই। এ ঘটনায় আদমদিঘি থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তারা আমার অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং আদমদিঘি থানার ওসি আমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। তারা আমাকে বলেন এটি রেলওয়ের বিষয়, এই অভিযোগ সান্তাহার রেলওয়ে থানায় গিয়ে করুন। আদমদিঘি থানা পুলিশের কথা শুনে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তারা বলেন, আপনার বাবা জীবিত রয়েছে। মারা গেলে মামলা নেওয়া যেত। আমরা এখন কোথায় যেয়ে অভিযোগ করব? এ ঘটনার পর থেকে মানুষের সামনে যেতে পারছি না। আমার বাবা তো ছিনতাইকারী না। সে বৈধ পথে ব্যবসা করে আসছিলেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে বগুড়া আদমদিঘি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি রেলওয়ে পুলিশের বিষয় তাই আমরা কোনো অভিযোগ নেইনি।
বিজ্ঞাপন
সান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি জিআরপি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, তারা প্রথমে আদমদিঘী থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল। সেখানে তাদেরকে জিআরপিতে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। তখন তারা আমার থানায় এসেছিল। আসার পরে তাদেরকে নাকি আবার আদমদীঘি থানা থেকে ফোন করা হয় তখন তারা আবারও আদমদিঘী থানায় অভিযোগ জানাতে চলে যায়। পরে তারা আর আমার থানায় আসেনি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা সবসময় অভিযোগ এবং তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

Viewed 1670 times

Spread the news
Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.
error: Content is protected !!