শাপলা প্রতীক বরাদ্দ প্রশ্নে ব্যাখ্যা দিল এনসিপি

রাজনীতি ডেস্ক রিপোর্টঃ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতীক হিসেবে শাপলা বরাদ্দ পেতে দলটি একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বরাত দিয়ে ব্যাখ্যাটি নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
এতে বলা হয়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি আত্মপ্রকাশ করার পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধি দল নিয়মিত মতবিনিময়, বৈঠক ও যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। এনসিপির প্রতিনিধি দল এপ্রিল মাস থেকে ইসির সঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া, নিবন্ধনের সময়সীমা, প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা বিষয় নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন বিবিধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর সংশ্লিষ্ট বিধানে নতুন করে নির্বাচনি প্রতীক তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ইসির তালিকায় প্রতীক যুক্ত করতে কমিশন একটি কমিটি গঠন করে এবং সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করে। ওই কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে এনসিপির একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ জুন ইসিতে বৈঠক করেন এবং বৈঠকে তিনি চূড়ান্ত তালিকায় শাপলা প্রতীক থাকার বিষয়টি আশ্বস্ত করেন। এছাড়া এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এরপর গত ২২ জুন এনসিপি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক প্রকাশিত ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখের ১৭.০০.০০০০.০২৫.৫০.০৯২.২৪-৪৯ নং স্মারকের গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে এবং দলের অনুকূলে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়।
এনসিপির ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, এনসিপি ইসির কাছে ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের আপামর জনসাধারণ এনসিপির প্রতীক হিসাবে ‘শাপলা’-কে চিনতে শুরু করে এবং গণমানুষের সঙ্গে এনসিপির শাপলা প্রতীককেন্দ্রিক এক অভূতপূর্ব আত্মীক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
এছাড়া গত জুলাইয়ে এনসিপি দেশজুড়ে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে এবং ওই কর্মসূচিতে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ এনসিপিকে আপন করে নেয় এবং স্বতস্ফূর্তভাবে খাল-বিল-জলাশয় থেকে শাপলা সংগ্রহ করে ওই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এনসিপির প্রতীক হিসাবে শাপলাকে হৃদয় থেকে বরণ করে নেয়।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হঠাৎ করে ৯ জুলাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে এনসিপি জানতে পারে, শাপলাকে নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে তফশিলভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ইসি।
শাপলা জাতীয় প্রতীক হওয়ায় নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে এটি বিধিমালার তফসিলভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানায় ইসি।
এরপর ১৩ জুলাই এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে ইসিতে বৈঠক করেন এবং সেখানে আলোচনায় ও একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেন যে, শাপলাকে জাতীয় প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত ব্যাখ্যা আইনানুগভাবে সঠিক নয় এবং এই বিষয়ে কমিশনের গৃহীত অবস্থানের আইনি ভিত্তি নেই।
এনসিপি বলছে, ওই বৈঠকে দলটি স্পষ্ট করে জানায়, বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(৩), The Bangladesh National Anthem, Flag and Emblem Order, 1972 এর ধারা ৪, Bangladesh National Emblem Rules, 1972 এর বিধি ৩ এবং অন্যান্য বিদ্যমান আইন অনুসারে ‘শাপলা’ প্রতীক তফশিলে অন্তর্ভুক্ত করা এবং রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে কোনও আইনগত বাধা নেই। ১৯৭২ সালের অর্ডারের ৩য় তফসিল এবং ১৯৭২ সালের বিধিমালার পরিশিষ্ট-ক তে জাতীয় প্রতীকের নকশা অংকিত আছে। ওই নকশা অনুযায়ী জাতীয় প্রতীক হচ্ছে লালচে এবং হলুদ রঙের যুগল বৃত্তের ভেতরে লালচে এবং হলুদ রঙে অঙ্কিত পানির ওপর ভাসমান শাপলা ফুল, দুই পাশে দুটি ধানের শীষ, উপরে তিনটি সংযুক্ত পাট পাতা যার ঠিক দুই পাশে দুটি করে চারটি তারকার সন্নিবেশ ও সামষ্টিক রূপ।
অর্থাৎ জাতীয় প্রতীকের নকশা এবং রঙ ১৯৭২ সালের অর্ডারের ৩য় তফশিল ও বিধিমালার পরিশিষ্ট-ক দ্বারা সুনির্দিষ্ট। তাছাড়া, জাতীয় প্রতীকের শাপলাটি পানিতে ভাসমান, কিন্তু ‘ভাসমান শাপলা’ নামে কোনও প্রতীক তফশিলে অন্তর্ভুক্ত করার আয়োজন ছিল না। শাপলা জাতীয় প্রতীকের চারটি স্বতন্ত্র উপাদানের একটি মাত্র উপাদান।
ইসি বিএনপিকে জাতীয় প্রতীকের চারটি উপাদানের একটি উপাদান ‘ধানের শীষ’ বরাদ্দ দিয়েছে এবং জেএসডিকে আরেকটি উপাদান ‘তারা’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে।
সেহেতু নির্বাচন কমিশন ‘শাপলা’-কে প্রতীকের তালিকাভুক্ত করে রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে পারে।
এছাড়াও, ইসি জাতীয় ফল কাঁঠালকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে এবং তৃণমূল বিএনপি নামের আরেকটি দলকে ‘সোনালি আঁশ’ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে।
সুতরাং শাপলা জাতীয় ফুল হলেও দলের প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে আইনগত কোনও বাধা নেই।
ধানের শীষ, শাপলা, পাটপাতা ও তারকা আলাদা আলাদা করে চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আর এই চারের সমষ্টিই হচ্ছে জাতীয় প্রতীক, যা দুই রঙের দুটি বৃত্ত দ্বারা পরিবেষ্টিত। জাতীয় প্রতীকের উপাদানের মধ্যে দুইটি উপাদান ইতোমধ্যে দুইটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বরাদ্দকৃত।
সর্বোপরি, ‘শাপলা’-কে প্রতীকের তালিকায় তালিকাভুক্ত না করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ভুল আইনি ভিত্তি ও বোঝাপড়ার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
এরপর এনসিপির প্রতিনিধিদল দফায় দফায় কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত
Viewed 400 times