নবীজির (সা.) সুন্নাত পালনের আদব ও গুরুত্ব
ডেস্ক রিপোর্টঃ
ইসলাম মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ জীবনধারার দিকনির্দেশিকা প্রদান করেছে। সেই দিকনির্দেশনার সর্বোচ্চ দিক হলো নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। নবীজির (সা.) জীবন, আচরণ ও আদর্শ মুসলিম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের জন্য উদাহরণস্বরূপ। সুন্নত পালন মানে শুধু ইবাদত বা রীতিনীতি মেনে চলা নয়, বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَّا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
‘রাসুল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।’ (সুরা হাশর: আয়াত ৭)
এই আয়াতেই সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে যে, নবীজির (সা.) সুন্নত গ্রহণ ও পালন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক এবং তা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যমও বটে।
নবীজির (সা.) সুন্নত পালনের গুরুত্ব
১. সুন্নত হলো ইসলামের পূর্ণতা
নবীজির (সা.) সুন্নত ইসলামের অনুষঙ্গ। যারা সুন্নাত অনুসরণ করে, তারা ইসলামের পূর্ণ রূপকে অনুধাবন করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
مَن رَغِبَ عَن سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
‘যে আমার সুন্নাত থেকে বিচ্যুত হবে, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (বুখারি)
২. সুন্নত মানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
সুন্নত পালন মানে আল্লাহর আনুগত্য মেনে চলা এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন করা। নবীজির (সা.) পথে চলা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরিচয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ
‘বলুন, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসুলের আনুগত্য কর।’ (সুরা আন-নূর: আয়াত ৫৪)
৩. সুন্নাত মানুষকে নৈতিকভাবে উন্নত করে
নবীজির (সা.) চরিত্র ও আচরণ অনুসরণ করলে মনুষ্যত্বের সর্বোত্তম দিকগুলো প্রতিফলিত হয়—দয়া, ধৈর্য, সততা, নম্রতা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
إنما بعثت لأتمم مكارم الأخلاق
‘আমি শুধু নৈতিকতার সেরা গুণাবলি সম্পূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (আহমাদ ৮৯৫২)
৪. সুন্নাত পালন সমৃদ্ধি ও বরকত বয়ে আনে
নিয়মিত নবীজির (সা.) সুন্নতপূর্ণ ইবাদত ও রীতি মেনে চলা জীবনকে সহজ, শান্তিপূর্ণ ও বরকতময় করে। এতে বোঝা যায় যে সুন্নাত ও নবীজির (সা.) নিয়ম মেনে চলা জীবনে প্রকৃত সমৃদ্ধি ও বরকত আনে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو ردّ
‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে, যে বিষয়ে আমার অনুমোদন নেই, তা আমলকারীর ওপর প্রত্যাখ্যাত হবে।’ (মুসলিম ১৭১৮)
৫. সুন্নতের অনুসরনেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ
নবীজির (সা.) পথ অনুসরণ কেবল দুনিয়ার জন্য নয়, আখিরাতের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ
‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ৩১)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَ
‘যে রাসুলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল।’ (সুরা নিসা: আয়াত ৮০)
নবীজির (সা.) সুন্নাত পালন হলো মুসলিম জীবনের ভিত্তি। এটি কেবল ইবাদত নয়, বরং নৈতিকতা, চরিত্র ও জীবনযাত্রার পূর্ণতা প্রদান করে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি যে, নবীজির (সা.) নির্দেশিত পথ অনুসরণ করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি, দুনিয়া ও আখিরাতের বরকত, এবং আধ্যাত্মিক শান্তি অর্জন সম্ভব।
সুন্নতকে শুধুমাত্র নিয়মের সীমাবদ্ধতা হিসেবে না দেখে, আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আলোকবর্তিকা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। কেননা নবীজির (সা.) আদর্শ অনুসরণ আমাদের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে, মনকে দৃঢ় করে এবং মানবিক জীবনের সর্বোত্তম গুণাবলির পথে পরিচালিত করে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নবীজির (সা.) সুন্নাত অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। آمين يا رب العالمين।
Viewed 100 times