May 19, 2025

Daily Amar Vasha

উত্তর জনপদে সত্য প্রকাশে দৃঢ়

‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে ইউনূসের মন্তব্যের পর যে ‘পরিকল্পনা’ নিতে বাধ্য হলো ভারত

ডেক্স রিপোর্ট:  চলতি বছরের মার্চে চীন সফরে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই সময় তিনি বলেন, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো (সেভেন সিস্টার্স) স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। এ অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক হলো বাংলাদেশ। এছাড়া চীনা অর্থনীতির সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার ওই মন্তব্যের পরই যেন নড়েচড়ে বসে ভারত। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর যেন বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়, সেজন্য মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত চার লেনের নতুন মহাসড়ক তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটি। যা ২০৩০ সাল নাগাদ শেষ হবে বলে জানা গেছে।

শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এমনই তথ্য জানিয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

 

ভারতের জাতীয় মহাসড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল) এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ড. ইউনূসের ওই মন্তব্যের জেরেই তারা এই নতুন মহাসড়ক তৈরি করবেন। যেন বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল না হতে হয়।

১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক হবে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের প্রথম দ্রুতগতির মহাসড়ক। এর মাধ্যমে মূলত কলকাতার সঙ্গে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে সমুদ্রপথ খোলা হবে।

তবে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমালেও মিয়ানমারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে ভারত।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতার সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে মিয়ানমারের রাখাইনের কালাদান মাল্টি মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টে অর্থায়ন করছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ প্রজেক্টের মাধ্যমে কলকাতা বন্দরকে রাখাইনের সিত্তে নদী বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। একইসঙ্গে সিত্তে বন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের পালেতওয়াকে অভ্যন্তরীণ নদীপথের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে। এরপর সেখান থেকে ভারতের মিজোরামের জোরিনপুইকে সড়কের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে। এগুলোর সঙ্গে মিজোরামের জোরিনপুই-লংটলাই-আইজলে আরও অবকাঠামো ও সড়ক তৈরি করে পুরো অঞ্চলটিকে সংযুক্ত করা হবে।

ভারতের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, উত্তরপূর্বাঞ্চলে এটি শুধু প্রথম দ্রুতগতির মহাসড়কই হবে না, পাহাড়ি ওই অঞ্চলটিতে প্রথম কোনো প্রজেক্টও হবে। শিলং-শিলচরের মহাসড়কটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ শিলচর মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং আসামের বারাক উপত্যকার প্রবেশদ্বার। এর মাধ্যমে এটি ভারতের ওই অংশটির জন্য বিশাল সংযোগে পরিণত হবে।

তিনি আরও বলেন, (মিয়ানমারের) কালাদান প্রজেক্টের মাধ্যমে কলকাতা ও ভিজাগ থেকে কার্গো উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পৌঁছাবে। এতে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। দ্রুতগতির এই করিডর সড়কের মাধ্যমে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করবে, যা ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বর্তমানে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো যুক্ত হওয়ার একমাত্র পথ হলো শিলিগুঁড়ি করিডর। যা ‘চিকেন নেক’ নামেও পরিচিত। এছাড়া মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মাধ্যমেও ভারত তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করতে পারে। তবে বাংলাদেশ যেহেতু বঙ্গোপসাগরে ভারতের চলাচল সীমিত করেছে, তাই ভারত ও মিয়ানমার কালাদান প্রজেক্টকেই বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যখন শিলং-শিলচরের মধ্যে মহাসড়কটির নির্মাণ শেষ হবে, তখন মিয়ানমার হয়ে কলকাতা ও উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যকে যুক্ত করার কাজও শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে শিলং-শিলচরের এ মহাসড়ক তৈরি ভারতের জন্য মোটেও সহজ হবে না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় সেখানে কাজ চালানোর সময় ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে।

গত ৩০ এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ ২২ হাজার ৮৬৪ কোটি রুপির এ মহাসড়কটি নির্মাণের অনুমোদন দেয়।

Viewed 610 times

Spread the news
Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.
error: Content is protected !!